সমাজ ও সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যবস্থাপনার যে উন্নয়ন ঘটেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক সময় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল খুবই সাদামাটা ধরনের। তাই তার ব্যবস্থাপনা ছিল সহজ। ব্যবস্থাপনা একটা বিষয়-এটাই ভাবনাতে আসেনি। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মনীষীবৃন্দের উন্নয়নচিন্তা প্রাচীনকালে মূলত বিভিন্ন সভ্যতাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। ব্যবিলনীয় সভ্যতাকালে রাজা হাম্মুরাবি, চৈনিক সভ্যতাকালে সানজু, ভারতীয় সভ্যতাকালে কৌটিল্য, গ্রীক সভ্যতাকালে সক্রেটিস, এরিস্টটল ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাস থেকে জানা যায়। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনকালে আলফারাবি, ইমাম গাজ্জালী প্রমুখ লেখক রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কিভাবে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা যায় ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের গুণাবলি কী থাকা উচিত-এ নিয়ে লেখালেখি করেছেন। মধ্যযুগের শেষ দিকে এসে লুকা প্যাসিওলী, স্যার থমাস মুর, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলী, স্যার জেমস স্টিউয়ার্ট, এ্যাডাম স্মীথ এবং আরও পরে রবার্ট ওয়েন, চার্লস ব্যাবেজ ইত্যাদি মনীষীবর্গ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। তবে অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে শিল্প বিপ্লবের ফলে বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এবং একত্রে হাজার হাজার শ্রমিক পরিচালনা ও কাজ আদায় করতে যেয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন বিশেষভাবে অনুভূত হয়। যে কারণে বেশ কিছু ব্যবস্থাপনা বিশারদ তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রের উন্নয়নে অবদান রাখেন। এর মধ্যে হেনরি ফেয়ল, এফ ডব্লিউ, টেলর, এইচ. এল. প্যান্ট, ফ্রাঙ্ক বি. গিলব্রেথ, লিলিয়ান এম. গিলব্রেথ, হুগো মুনস্টারবার্গ, অলিভার শেলডন, এলটন মেয়ো, চেস্টার আই. বার্নার্ড প্রমুখ মনীষীর নাম উল্লেখযোগ্য । তাঁদের পবেষণা, চিন্তা ও কর্ম ব্যবস্থাপনাকে একটা সমৃদ্ধ ও গৌরবময় শাস্ত্রের পর্যায়ে উন্নীত করে। বর্তমানকালে এটি এতটাই সমৃদ্ধ শাস্ত্র যে, এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়ে লেখা-লেখি ও গবেষণার অন্ত নেই । আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা, হিসাব ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় এখন আলাদা শাস্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে আরও বিকশিত ও সুষমামণ্ডিত করেছে।